করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পরও থেকে যেতে পারে ক্লান্তি। ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যের দিকে সঠিক নজর দেয়া। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ফুসফ...
করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পরও থেকে যেতে পারে ক্লান্তি। ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যের দিকে সঠিক নজর দেয়া। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ফুসফুসের ব্যায়াম। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইবনে সিনা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ লুত্ফুল কবির।
করোনা সেরে গেলেও ক্লান্তি থাকার কারণ সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মাহফুজা শাহীনুর। গত মাসে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তিনি পরীক্ষা করান। রিপোর্টে করোনা পজিটিভ এলে চিকিত্সকের পরামর্শে তিনি বাসায়ই আইসোলেশনে ছিলেন। ২১ দিন পর তিনি সুস্থ হলেও শরীর এখনো বেশ দুর্বল। অফিস শুরু করলেও আগের মতো কাজ করতে পারছেন না।
করোনা হলো রেসপিরেটরি ভাইরাস। তাই সবার আগে এটি থাবা বসায় ফুসফুসে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। করোনা চলে গেলেও তাই শরীরের কার্যক্ষমতা কমে যায়। এই ঝক্কি থেকে শিগগির রেহাই না পেলেও কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফুসফুসে অক্সিজেন সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এতে ধীরে ধীরে শরীরের দুর্বল ভাব দূর হয়ে কার্যক্ষমতা ফিরে আসে।
পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের বিকল্প নেই। সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া এবং তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। যেহেতু শরীর অল্প কাজেই দুর্বল হয়ে পড়ে; তাই ঘুমের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সকালে বারান্দা কিংবা ছাদে থাকার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে ভোরবেলায় বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে। এই সময়ের বাতাস আপনার ফুসফুসের জন্য উপকারী।
হাঁটুন
করোনা থেকে সেরে ওঠার পর নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করুন। এতে নিজের শরীরে দমের অবস্থা কেমন সেটাও বুঝতে পারবেন। স্বাভাবিকভাবে আগের থেকে ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় অল্পতেই হাঁপিয়ে যাবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। প্রতিদিন ধৈর্য ধরে হাঁটলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম
জোর বাড়ানোর জন্য প্লাংক, সাইড প্লাংক, পুশ আপ ইত্যাদি ব্যায়াম করতে পারেন। ফুসফুসে অক্সিজেন সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ব্যায়াম করার সময় জোরে শ্বাস নিতে হবে আর ধীরে ছাড়তে হবে। এতে দেহের পেশিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
যোগব্যায়াম
শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে দুই হাত সোজা করে পদ্মাসনে বসুন, মেরুদণ্ড সোজা রেখে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এক আঙুলে ডান দিকের নাক চেপে ধরে বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস নিন। পুরো শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। মাউন্টেন যোগা বা তাড়াসনও বেশ কার্যকর ফুসফুসের কর্মক্ষতা বৃদ্ধিতে।
ওয়েট ট্রেনিং
করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও ক্লান্তি কত দিন থাকবে তা বলা মুশকিল। কারো ক্লান্তি মাসখানেক কিংবা আরো বেশিও থাকতে পারে। তবে দেহের কার্যক্ষমতা যে হ্রাস পাবে এতে সন্দেহ নেই। হাঁটাচলা ও হালকা ফ্রি হ্যান্ডের পাশাপাশি ওয়েট ট্রেনিং ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে উঠলে শরীরের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘ শ্বাস ও ধীরে শ্বাস ছাড়ার মধ্য দিয়ে ফুসফুসে অক্সিজেনের সঞ্চালনও বৃদ্ধি পাবে।
শুয়ে ব্যায়াম
বুকে বালিশ দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে জোরে শ্বাস নিন। ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে বারবার শ্বাস নিন আর ছাড়ুন। পজিশনটি করোনা রোগীর জন্য খুবই উপকারী। এটি আপনার ফুসফুস থেকে রক্তে অক্সিজেন বিনিময়ে সহায়তা করবে।
সতর্কতা
বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে এই ধরনের ব্যায়াম করতে হবে। যাদের হূদেরাগ কিংবা বুকে ব্যথাজনিত রোগ আছে তাদের এ ধরনের ব্যায়াম করার আগে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।