Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Classic Header

{fbt_classic_header}

Top Ad

LATEST UPDATES:

latest

বাড়ির জন্য নিন নানা রকম ঋণ

পণ্য উৎপাদনশীল খাতে ব্যাংকঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে দেড় বছর ধরেই তোড়জোড় চলছে। গত সপ্তাহেই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকের চেয়া...

পণ্য উৎপাদনশীল খাতে ব্যাংকঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে দেড় বছর ধরেই তোড়জোড় চলছে। গত সপ্তাহেই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে এ ব্যাপারে একটি কমিটি করে দিয়েছেন। একসময় তা কার্যকর হবে কি না, কারও জানা নেই। কিন্তু ফ্ল্যাট কেনার জন্য বা বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদের হার কত হবে, তা নিয়ে আলোচনা নেই কোথাও। দু–একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এই হার এখনো ১০ থেকে ১৬ শতাংশের মতো।

সুদের হার জানার আগে জেনে নেওয়া যাক আবাসন খাতে ঋণ দেয় কারা। দেশে গৃহঋণের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। গৃহঋণ দেওয়াটাই এই সংস্থার মূল কাজ। সরকারি ব্যাংকগুলোও গৃহঋণ দেয়, দেয় অনেক বেসরকারি ব্যাংকও। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে কেউ ঋণ দেয় নামকাওয়াস্তে, নতুন ব্যাংকের কেউ আবার দেয়ও না। কেউ আবার আবাসন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন নতুন ঋণ পণ্য চালু করেছে।


এর বাইরে আবাসন খাতে ঋণ দেওয়ার জন্যই গড়ে উঠেছে বেসরকারি কিছু কোম্পানি রয়েছে। যেমন ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ), ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইত্যাদি। ভালো অঙ্কের ঋণ দিতে গড়ে উঠেছে লংকাবাংলা ফিন্যান্স, আইডিএলসি, আইপিডিসির মতো কিছু লিজিং কোম্পানিও (আর্থিক প্রতিষ্ঠান)।

ব্যতিক্রম ছাড়া কেউ অবশ্য চাহিদার পুরো টাকা ঋণ দেয় না। ব্যাংক বা বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা নিজের থাকতে হয়। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনতে প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। বাকি ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা ক্রেতার নিজের থাকতে হয়। যদিও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। তারা ফ্ল্যাটের দামের পুরো টাকাই ঋণ দিতে পারে।

বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদার তুলনায় গৃহঋণের জোগান কম। এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। তিনি বলেন, বার্ষিক চাহিদার মাত্র ৭ শতাংশ সরকার পূরণ করছে। বাকিটার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে বেসরকারি খাতের ওপর।

কত টাকার, কী ঋণ

সরকারি সংস্থা বিএইচবিএফসি প্রধানত ঋণ দেয় বাড়ি নির্মাণে। ফ্ল্যাট কেনার জন্যও ঋণ দেয়, তবে কম। এমনকি ফ্ল্যাট নিবন্ধন করতেও ঋণ দেয় এই প্রতিষ্ঠান। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রায় একই ধরনের ঋণ দেয়।

বিএইচবিএফসি এখন পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অভিজাত এলাকায় বাড়ি নির্মাণে একক ব্যক্তিকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে এ ঋণের পরিমাণ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে। বিএইচবিএফসি চলতি সপ্তাহেই এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করার কথা। সংস্থাটি কৃষকদের বাড়ি করার জন্যও ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। আর প্রবাসীদের দিচ্ছে ১ কোটি টাকা। এ ছাড়া আবাসন মেরামতের জন্য এই সংস্থার ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা।

সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিচ্ছে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক বাড়ি নির্মাণে ‘সোনালী নীড়’ নামে গ্রামাঞ্চলে ঋণ দিচ্ছে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

আইএফআইসি ব্যাংক আবাসন ঋণে গুরুত্ব দিয়ে ‘আমার বাড়ি’ নামে আলাদা একটি পণ্য চালু করেছে। বাড়ি নির্মাণে ২ কোটি টাকা দিলেও ব্যাংকটি সেমিপাকা ভবন নির্মাণে দিচ্ছে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ।

ডিবিএইচ বাড়ি নির্মাণ, বাড়ি বর্ধিতকরণ, বাড়ি উন্নয়ন, ফ্ল্যাট কেনা ও প্লট কেনায় ঋণ দিচ্ছে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ২ কোটি টাকা পর্যন্ত। ন্যাশনাল হাউজিং ঋণ দিচ্ছে ফ্ল্যাট কেনা, নিজের বাড়ি নির্মাণ, বাড়ি বর্ধিতকরণ, প্লট কেনা, বাণিজ্যিক ভবনে জায়গা কেনা ইত্যাদি খাতে।

কার সুদ কত

একমাত্র বিএইচবিএফসি সরল সুদে ঋণ দিচ্ছে। অন্যদের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে। বিএইচবিএফসির সুদও কম। কৃষকদের জন্য ৭ শতাংশ। আর ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ।

সোনালী ব্যাংকও ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে গ্রামাঞ্চলে বাড়ি নির্মাণে। তবে অন্য ঋণ পণ্যে সুদের হার ৯ শতাংশ।

বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের সুদ বেশি। এদের সুদের হার ব্যাংকভেদে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহক বুঝে সুদের হার ৯ শতাংশও রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্ল্যাট কেনা ও বাড়ি নির্মাণে বেসরকারি খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গৃহঋণ দিচ্ছে ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ সুদে।

আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, আবাসন খাতে সুদের হার এখনো বেশি। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ঘূর্ণমান পুনঃ অর্থায়ন তহবিল চালু করেছিল। পাঁচ বছর চলার পর অজানা কারণে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি আবার চালু হওয়া উচিত।

গৃহঋণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

গৃহঋণ পেতে কম কাগজপত্র লাগে না। তবে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ঋণ নিতে কাগজপত্র একটু বেশি লাগে। সরকারি ব্যাংক থেকেও প্রায় তাই। বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবশ্য অত কাগজপত্র চায় না। বাড়ি নির্মাণের চেয়ে অবশ্য ফ্ল্যাট কেনায় কাগজপত্র কম লাগে।

বাড়ি নির্মাণ ঋণের জন্য প্রথমেই দরকার যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নকশার সত্যায়িত ফটোকপি। মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান, খাজনা রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি। এ ছাড়া লাগবে সিএস, এসএ এবং আরএস, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত কপি।

জেলা বা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি)। সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে মূল বরাদ্দপত্র এবং দখল হস্তান্তরপত্রও লাগবে।

আর লাগবে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, তিন কপি সত্যায়িত স্বাক্ষর, সম্প্রতি তোলা দুই কপি পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি।

এখানেই শেষ নয়, তিন হাজার টাকা আবেদন ফি জমার রসিদ, আবেদনকারীর আয়ের প্রমাণপত্র, চাকরির ক্ষেত্রে ঋণ আবেদন ফরমের নির্দিষ্ট পাতায় বেতন সনদ এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ও আয় সম্পর্কে হলফনামা। আয়কর পরিশোধযোগ্য আয় হলে ই-টিআইএন নম্বরসহ আয়ের পরিমাণ উল্লেখসহ আয়কর প্রত্যয়নপত্র লাগবে।

ঋণ আবেদনকারীর নিজস্ব আয় না থাকলে উপার্জনশীল পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে জামিনদার করা যায়। অনুমোদিত নকশা মোতাবেক বাড়ি নির্মাণ করা হবে এবং অন্য কোথাও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে না মর্মে উপযুক্ত মূল্যমানের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ঘোষণাপত্রও দিতে হবে। আরও দিতে হবে প্রকৌশল সনদ ও ভূমিকম্প প্রতিরোধী সনদ।

ফ্ল্যাট ঋণের জন্য অবশ্য কাগজপত্র কম লাগে। এ জন্য ফ্ল্যাট ক্রেতা এবং ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পাদিত ফ্ল্যাট ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে। এ ছাড়া জমির মালিক এবং ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তিপত্রের মূল কপি এবং বরাদ্দপত্র লাগবেই।

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, দুই কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি ও সাদা কাগজে তিনটি নমুনা স্বাক্ষর অবশ্যই লাগবে। ডেভেলপার কোম্পানির সংঘস্মারক, সংঘবিধি ও নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপিও দাখিল করতে হবে।